
দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল রয়েছে জঙ্গলমহলে। এই কারণে এটি দক্ষিণবঙ্গের ফুসফুস হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু, সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এই বনাঞ্চল নিয়ে উঠে এল উদ্বেগজনক তথ্য। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলমহলের ঘন শালবন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই ৩০ বছরে ঐতিহ্যবাহী শালগাছের ঘন বনাঞ্চল হ্রাস পেয়েছে ৫৯.৪৩ শতাংশ। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন: বকুল-ছাতিম- কৃষ্ণচূড়া!গ্রামের স্বাদ কলকাতায়! আরও সবুজ নিউটাউন, কী কী পরিকল্পনা?
দ্যা টেলিগ্রাফের রিপোর্ট অনুযায়ী, গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজা এনএল খান মহিলা কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক প্রভাত কুমার শিট এবং তাঁর ছাত্র সৌমেন বিসুই। ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৩০টি বনাঞ্চলের স্যাটেলাইট চিত্র এবং ফিল্ড সার্ভে করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। অধ্যাপক জানিয়েছেন, জঙ্গলমহলের শালবন এখন বিপন্ন। একদিকে কৃষিকাজের জমি সম্প্রসারণ, অন্যদিকে রাস্তা-ঘাট ও বসতি গড়ে তোলার ফলে লাগাতার জঙ্গলের গাছ নিধন করা হচ্ছে। বনবিভাগের তরফে বৃক্ষরোপণ করা হলেও মূলত ইউক্যালিপটাস ও বাবলার মতো গাছ লাগানো হচ্ছে। তবে এগুলো স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই তিনি জানিয়েছেন।
সমীক্ষা অনুযায়ী, জঙ্গলমহলে সবচেয়ে বেশি বনাঞ্চল কমেছে ঝাড়গ্রামের জাম্বনি ব্লকের বেলিয়া গ্রামে। ১৯৯২ সালে সেখানে বনভূমি ছিল ১.৯২ বর্গকিলোমিটার তবে ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.০৫ বর্গকিলোমিটারে। অন্যদিকে, মেদিনীপুর সদর ব্লকের দেলুহা গ্রামে একই সময়ে বনাঞ্চল কমেছে ১.২০ থেকে ০.৫৮ বর্গকিলোমিটারে। গবেষকদের দাবি, এই বনাঞ্চল ধ্বংসের পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন শালবনের উপর নির্ভরশীল আদিবাসী সম্প্রদায়। এ বিষয়ে স্থানীয়দের দাবি, এক সময় মহুয়া, শালপাতা জোগাড় করে তাঁদের সংসার চলত। তবে এখন জ্বালানি কাঠই পাওয়া যায় না ঠিকঠাক। মানুষ বেড়েছে, অথচ বনজ সম্পদ কমেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বনাঞ্চলের ইউক্যালিপটাস বা বাবলা জাতীয় গাছ রোপণ যেমন মাটির গুণাবলিকে নষ্ট করে, তেমনি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই গবেষকরা শাল, কেন্দু, মহুয়া প্রভৃতি গাছ রোপণের পরামর্শ দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আশার বার্তা শোনাচ্ছেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ রোপণ করছি না। গত তিন বছর ধরে শাল ও অন্যান্য স্থানীয় প্রজাতির গাছই লাগানো হচ্ছে, যাতে বাস্তুতন্ত্র ফিরে আসে।’