
বাংলার পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণের জায়গা সুন্দরবন। সুন্দরবনে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। আর শীতের মরশুমে সেটাই যেন বাঁধ ভাঙা ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ে। তবে এবারের বর্ষায় দক্ষিণরায়দের জায়গা সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করল বন দফতর। আগামী ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণ করতে যেতে পারবেন না পর্যটকরা। এই বর্ষায় সুন্দরবনের ইলিশ উৎসব এবং বাঘ ও পাখিরালয়ের সৌন্দর্য দর্শন থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে পর্যটকদের। এই কথা প্রকাশ্যে আসতেই মনমরা হয়ে পড়েছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।
এই গোটা বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই নানা গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের মনে। এবার এগিয়ে এসে বিস্তারিত তথ্য জানাল বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্রপ্রকল্প কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছি, সুন্দরবন ব্যাঘ্রপ্রকল্প পর্যটকদের জন্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর–সহ সারা বছরই খোলা থাকে। এই তিন মাসের জন্য এই ব্যাঘ্রপ্রকল্প বন্ধের বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।’ এই কথা এবার সামনে আসতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন পর্যটকরা। সুতরাং সুন্দরবনে ভরা বর্ষার মরশুমে যাওয়া যাবে। ঘুরে দেখা যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কপাল ভাল থাকলে দেখা হতে পারে দক্ষিণরায়ের সঙ্গেও।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বিশেষ নৈশভোজে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ, নয়াদিল্লি যাচ্ছেন অভিষেক
তাহলে এমন খবর ছড়াল কেন? জুন মাস থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে নানা বন্য প্রাণীর প্রজননের মরশুম। তার জেরে সুন্দরবনে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লেও বন্য প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনচক্র এবং প্রজনন প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। সেক্ষেত্রে বন্য প্রাণীদের প্রজনন বৃদ্ধি এবং তাঁদের অবাধ বিচরণের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতেই সুন্দরবন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর চাউর হয়ে যায়। তবে সুন্দরবনের কোর এরিয়াতে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। সুন্দরবনের জন্য এই নিয়ম শুধু তিন মাসের জন্য নয়। সারা বছরই সুন্দরবনের কোর এরিয়ায় যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতি লাগে সাধারণ পর্যটকদের।
আর এই বিষয়টিকেই অন্যভাবে চাউর করে দেওয়া হয়। আর তার জেরে সুন্দরবনের ব্যবসায়ীদের থেকে শুরু করে পর্যটকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। এখানে পর্যটনের উপরই নির্ভরশীল মানুষজন। মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি পর্যটনই এখানের আর্থিক উপার্জনের পথ। সেখানে তিন মাস বন্ধ থাকবে পর্যটকদের আনাগোনার মতো খবর চাউর হতেই কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করে সকলের। ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট সুন্দরবন। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখার জন্য পর্যটকরা সুন্দরবন যান। তবে বাঘ ছাড়াও নানা প্রজাতির কুমির, হরিণ, পাখিরও দেখা মেলে সুন্দরবনে। ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী প্রজননের সময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এলাকায় পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধ করা হয়।