
হাতি বা বাইসনের নয়, বুনো শুয়োরের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা। রাত হলেই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হানা দিচ্ছে শুয়োর। পাট, ভুট্টা, পটল, লাল আলুসহ একের পর এক চাষের জমিতে তছনছ চালাচ্ছে তারা। চাষিদের অভিযোগ, শুধু ফসল মাড়িয়ে নয় মাটি তুলে, গাছ উপড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে এই বন্য জন্তু। তার জেরে কার্যত ঘুম উড়েছে নদিয়ার নবদ্বীপের ভাগীরথীর ধারে অবস্থিত মায়াপুর-বামুনপুকুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ইদ্রাকপুর গ্রামের মানুষদের। অথচ কোনও পদক্ষেপ করছে না বন বিভাগ বা কৃষি দফতর।
আরও পড়ুন: বিমানের সঙ্গে শুকরের ধাক্কা ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে
জানা যাচ্ছে, এই গ্রামের মানুষরা হলেন কৃষি নির্ভর। গঙ্গার চর ও পাড়ের বিস্তীর্ণ জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। তবে এখন রাতে চাষের জমিতে পাহারা না দিয়ে উপায় নেই, কারণ রাতভর শুয়োর তাণ্ডব চালানোর পর সকালে গিয়ে দেখা যাচ্ছে পুরো জমি তছনচ হয়ে গিয়েছে।স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, দু-তিন বছর ধরে শুয়োরের উপদ্রব থাকলেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২০০০ সালের বন্যার পর থেকেই এই অঞ্চলে ঢুকে পড়ে বুনো শুয়োরের দল। শুরুতে নদীর চর, জঙ্গল, আমবাগান, ঝোপঝাড়—এইসব জায়গায় তারা আশ্রয় নিলেও এখন গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে তাদের সংখ্যা। বাগপাড়ার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ভুট্টা, পাট, পটলের মতো ফসল লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে শুয়োর। পাটগাছের গোড়া তুলে দিচ্ছে। তাদের দৌড়াদৌড়িতে পাট মাড়িয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কৃষ্ণ ঘোষ জানান, লাল আলুর মতো লাভজনক ফসল এখন আর কেউ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ভুট্টা চাষ একপ্রকার বন্ধই হয়ে গিয়েছে। ধানের বীজতলা পর্যন্ত নষ্ট করে দিচ্ছে বন্য প্রাণীরা। বিডিও, কৃষি দফতর এবং বন দফতর সহ সব জায়গায় সমস্যার কথা জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
প্রশাসনিক উদাসীনতা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ও গ্রামের বাসিন্দা তাপস ঘোষ। তাঁর কথায়, প্রশাসনের তরফ থেকে কোনওরকম হস্তক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি। শুধু অভিযোগ নিয়ে বসে থাকলে চাষি বাঁচবে না। দ্রুত বুনো শুয়োর ধরার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাধ্য হয়েই গ্রামের কৃষকরা এখন রাতের অন্ধকারেও জমি পাহারা দিচ্ছেন। তবে প্রশাসনের এই গাফিলতি নিয়েই ফুঁসছে গোটা এলাকা।