
পলাতক ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়ার ঋণ পরিশোধের দাবি নিয়ে এবার মুখ খুলল সরকার এবং ব্যাঙ্কগুলি। সম্প্রতি এক পডকাস্টে বিজয় মালিয়া দাবি করেন, তিনি ব্যাঙ্কের সমস্ত বকেয়া ঋণ মিটিয়ে দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। সরকার বলেছে যে মালিয়ার এখনও ৭,০০০ কোটি টাকার ঋণ বকেয়া রয়েছে এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে মালিয়ার দাবি ‘ভিত্তিহীন’। সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে মালিয়ার দাবি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর, কারণ তিনি কেবল মূল পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিবৃতি দিয়েছেন। যদিও এখনও সুদ এবং অন্যান্য চার্জ সহ মোট ৬৯৯৭ কোটি টাকা পাওনা মেটানো বাকি তাঁর। (আরও পড়ুন: পাকিস্তানের শিরায় চোখ ভারতের, AWACS-এ পরিণত করতে কেনা হবে ৬টি বিমান)
আরও পড়ুন: রাজার শ্রাদ্ধে এসেছিল রাজ, মেঘালয়কাণ্ডে ধৃত সোনমের এই প্রেমিক কে?
২০১৩ সালে যখন ডেট রিকভারি ট্রাইব্যুনালে (ডিআরটি) মামলা দায়ের করা হয়, তখন কিংফিশার এয়ারলাইন্সের মোট এনপিএ (নন-পারফর্মিং অ্যাসেট) ছিল ৬,৮৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে নন-কিউমুলেটিভ রিডিমেবল প্রেফারেন্স শেয়ারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ডিআরটি-র নির্দেশ অনুসারে, বকেয়া সুদ এবং অন্যান্য চার্জ সহ মোট দায়বদ্ধতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭,৭৮১ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত গোয়ার বিখ্যাত কিংফিশার ভিলা বিক্রি-সহ মালিয়ার সম্পত্তি বিক্রি করে ১০৮১৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ব্যাঙ্কগুলি। এত কিছুর পরেও ব্যাঙ্কগুলি এখনও ৬,৯৯৭ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। (আরও পড়ুন: বিয়ের ৪ দিন পরই বাপের বাড়িতে গিয়ে স্বামীর খুনের ছক কষেছিল সোনম, দাবি পুলিশের)
আরও পড়ুন: এ যেন গৃহযুদ্ধ! ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের গ্রেফতারির পক্ষে সওয়াল ট্রাম্পের
সরকারের সাফ বক্তব্য, বিজয় মালিয়া ১৪ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে যে দাবি করেছেন, তা বাস্তব নয়। এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘শুধুমাত্র মূল ঋণের পরিমাণের কথা মাথায় রেখেই বিজয় মালিয়া এই দাবি করেছেন। কিন্তু কোনও ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তার ওপর সুদ বসতে থাকে। এ ছাড়া ঋণখেলাপিদের ওপর জরিমানার সুদও আরোপ করা হয়।’ মালিয়া নিজে দেশ থেকে পলাতক এবং ভারতে ফিরে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ছেন। তা সত্ত্বেও অতীতেও এই একই দাবি করেছিলেন তিনি। তাঁর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ব্যাঙ্কগুলির যে সম্পত্তি বেচে তাদের ঋণের অর্থ পুনরুদ্ধার করে, সেই প্রক্রিয়া তাদের বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত নীতিমালা অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে। (আরও পড়ুন: দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতছে ভারত,অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে পাক: বিশ্বব্যাঙ্ক)
আরও পড়ুন: গ্রেফতারির পর পুলিশকে কী বলেছিল সোনম? কীভাবে মেঘালয় থেকে গাজিপুর পৌঁছায় সে?
এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক বলেন, ‘ব্যাঙ্কের পুনরুদ্ধার নীতি প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার জন্য একই। বিজয় মালিয়া যে পক্ষপাতিত্বের বা চাপের অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। কিংফিশারকে দেওয়া কিছু ঋণও পুনর্গঠন করা হয়েছিল, যা এখন তদন্তাধীন রয়েছে। এমনকী আইডিবিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রধান যোগেশ আগরওয়ালের মতো উচ্চপদস্থ আধিকারিককেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই।’ (আরও পড়ুন: জেলা প্রশাসকদের হাতে বাংলাদেশিদের তাড়ানোর ক্ষমতা, বিধানসভায় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর)
আরও পড়ুন: ন্যাশনাল গার্ডে হয়নি কাজ, এবার লস অ্যাঞ্জেলেসে ৭০০ মেরিন পাঠালেন ট্রাম্প
বিজয় মালিয়াকে দেশে ফেরানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ২০১৬ সালে তিনি ভারত থেকে পালিয়ে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর অধুনালুপ্ত কিংফিশার এয়ারলাইন্স ১৭টি ভারতীয় ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছিল। সম্প্রতি এক ইউটিউবারের পডকাস্টে এই নিয়ে নীরবতা ভেঙে মালিয়া দাবি করেন, তাঁর সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলি ১৪,১০০ কোটি টাকারও বেশি উদ্ধার করেছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিমাণ ডিআরটি রায়ে নির্ধারিত ৬২০৩ কোটি টাকার ঋণের দ্বিগুণেরও বেশি। মালিয়া আরও দাবি করেছেন যে তিনি কখনই ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকার করেননি। ব্যাঙ্ক থেকে আদায় হওয়া অর্থের হিসাব চেয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টে পিটিশনও দাখিল করেছিলেন তিনি। মালিয়া তাঁর দাবির সমর্থনে অর্থ মন্ত্রকের ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলেছেন যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁর সম্পত্তি থেকে ১৪,১৩১.৬ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। তবে ভারত সরকার এবং ব্যাঙ্কগুলি মালিয়ার দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থ মন্ত্রকের এক প্রবীণ কর্মকর্তা বলেছেন, বিজয় মালিয়া যে দাবি করেছেন তা বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন। সুদ ও অন্যান্য চার্জ-সহ মোট ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি বকেয়া ছিল তাঁর।